ভ্যালেন্টাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস…খুব মধুর একটা দিন! আর কয়েকদিন পরই আসছে সেই কাঙ্খিত দিবস। সারা বিশ্বজুড়ে মানুষ তার প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করে। বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের জন্য এই দিবসটি যেন পরম আরাধ্য একটি দিন। কতো ভাবেই না মানুষ এই দিনটিকে উপভোগ্য করে তোলে। কতো আয়োজন পরিকল্পনা চলে সারা বছর ধরে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। 

যেহেতু এই দিনটা বসন্তের আগমনী দিন তাই বাঙালিদের জন্য এই দিনটা আরও বেশি আনন্দের।  চারিদিকে যেন ফুলেল সাজে সেজে ওঠে। বাসন্তী রঙের সমারোহ  বসে যেন।

পছন্দের মানুষকে খুশি করতে কেউ হয়তো বেছে নেয় ফুল, কার্ড, চকলেট, প্রিয় কোন উপহার, কেউ আবার একান্তে ভালোবাসার মানুষের সাথে সময় কাটাতে চান, কেউবা আবার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেই আনন্দ পান এই দিনটিতে। আজকের সেবা ব্লগে আমরা ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস এবং প্রিয়জনের সাথে Valentine’s Day special করবেন যেভাবে তা নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক। 

ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ইতিহাস 

একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তিনি কে ছিলেন – তা নিয়ে বিভিন্ন গল্প প্রচলিত। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন সম্পর্কে জনপ্রিয় বিশ্বাস হল তিনি খৃষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন। 

সেই সময় সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন। তার মনে হয়েছিল, বিবাহিত পুরুষরা খারাপ সৈন্য হয়ে থাকে। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন মনে করেলিলেন, এটি অন্যায়। তাই তিনি নিয়ম ভেঙ্গে গোপনে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। ক্লডিয়াস যখন এই খবর জানতে পারেন, তখন তার আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

কারাগারে থাকা অবস্থায় ভ্যালেন্টাইন কারা প্রধানের মেয়ের প্রেমে পড়েন। ১৪-ই ফেব্রুয়ারি যখন তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ভ্যালেন্টাইন ওই মেয়েটির উদ্দেশ্যে একটি প্রেমপত্র পাঠান। যেখানে লেখা ছিল, “তোমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ থেকে”। একটি নির্দিষ্ট দিনে ভ্যালেন্টাইন’স ডে পালনের বিষয়টি বেশ প্রাচীনকালের ঐতিহ্য, যা রোমান উৎসব থেকে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া (Lupercalia) নামে একটি উৎসব ছিল – আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। উদযাপনের অংশ হিসাবে ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তুলতেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠত, তারা দুজন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন বলে মনে করা হয়। অনেক সময় ওই জুটি বিয়ে সেরে ফেলতেন।

পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খৃষ্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল। একইসাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে এই উৎসব উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামটি মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠতে শুরু করে। আর মানুষ তার নিজের ভালবাসার মানুষের কাছে অনুভূতি প্রকাশের জন্য এই নামটি ব্যবহার করা শুরু করে।

প্রিয়জনের সাথে Valentine’s Day special করবেন যেভাবে

চকোলেট, চিঠি, ফুল বা পুতুলের বাইরেও ইউনিক ধরনের গিফট দেয়া যায় ভালোবাসার মানুষটাকে। চলুন দেখি আর কি বা কেমন হতে পারে সেই উপহার।

১. নিজের রোমান্টিক দিকটি ভালোবাসার মানুষের কাছে তুলে ধরার এ এক সুবর্ণ সুযোগ। সম্পর্কের শুরুর দিন গুলোর স্মৃতি মনে করতে আবার সেই পুরনো সময়টাতে ফিরে যেতে পারেন। প্রথম ভালোবাসি বলার জায়গাটাতে ঘুরে আসতে পারেন, প্রথম বসা রেস্তোরাঁয় চলে যেতে পারেন প্রথম দিনের সেই প্রিয় খাবার খেতে।

২. একটি কাচের জারে  রঙিন কাগজ কেটে অথবা হার্ট শেইপে কাগজ বা কার্ডবোর্ড কেটে তাতে বিভিন্ন ভাষায় পছন্দের ভালোবাসার কথা, পছন্দের বার্তা বা প্রিয় কবিতার লাইন দিয়ে ভরে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়া যায়।

৩. সাদা বা যে কোন পছন্দের মগ যে কোনো ক্রোকারিজের দোকানেই পেয়ে যাবেন। পার্মানেন্ট মার্কার বা অ্যাক্রেলিক পেইন্ট দিয়ে সুন্দর কিছু লাইন লেখা বা আঁকিবুকি করা কিংবা একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে ফোঁটায় ফোঁটায় বিভিন্ন রঙের নেইল পলিশ ফেলে তাতে মগের বাহিরটা ডুবিয়ে নকশা করে ফেলুন। ব্যস! কাজ শেষ। অদ্ভুত সুন্দর একটা গিফট তৈরি হয়ে যাবে । চেষ্টা করে দেখতে পারেন। 

 ৪. দোকান থেকে কার্ড কিনে উপহার না দিয়ে যদি নিজের হাতে বানানো একটা কার্ডে প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে কিছু কথা বা প্রিয় কিছু পঙক্তি লিখে মনের মতো করে করেন তবে সেটা হবে আরও স্মরণীয় উপহার।  

৫. রান্না করে প্রিয় মানুষটাকে খাওয়ানোর মজাই আলাদা। বিশেষ দিনটিতে বিশেষ ব্যক্তিটির জন্য তার পছন্দের কোন খাবার রান্না করে খাইয়ে তাকে চমকে দিতে পারেন। তাতে দিনটি হবে অন্যরকম স্পেশাল। 

৬. অরিগ্যামি  কিন্তু মোটামুটি সবাই পছন্দ করে। আর এ ধরনের ফরচুন টেলার খুব সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন ইন্টারনেটের সাহায্যে। তারপর এই কাগজের জিনিসটিকে সাজিয়ে তুলতে পারেন মজার মজার ভালোবাসার কথা দিয়ে। চাইলে সেটা নানান রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারেন। 

৭. প্রিয়জনের সাথে কাটানো বিশেষ মুহূর্ত গুলির ছবি দিয়ে স্ক্র্যাপবুক বানিয়ে উপহার দিতে পারেন যা সে সারাজীবন সযত্নে আগলে রাখবে। 

৮. পোশাক যে কোন উদযাপনে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ। যতো আয়োজনই করা হোক না কেন পোশাক মনের মতো না হলে যেন কোন আনন্দই পূর্ণতা পায় না। তাই এই দিনটিতে ভালোবাসার মানুষের জন্য বিশেষ পোশাক উপহার দিতে পারেন। দুজনের কাপল পোশাক ইদানীং খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শাড়ি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার কামিজ যে কোন পোশাক  উপহার দিতে পারেন।

৯. অনেকেই হয়ত লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপে আছেন! ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে কাছে না পাওয়ার আক্ষেপ হয়ত তাদের মনে রয়েই যাবে! তবে এ বিষয় নিয়ে মন খারাপের কিছু নেই। এ দিন অন্য কাপলদের দেখে মন খারাপ করে বসে থাকা উচিত নয়। মনে রাখবেন, অন্তরের মিল আর বিশ্বাস থাকলে সমস্ত দূরত্বকেও হার মানানো যায়।

  • ভিডিও চ্যাটে একসঙ্গে ডিনার করুন। এভাবে দূরত্বকে উপেক্ষা করেও আপনারা ভ্যালেন্টাইন্স ডে একসঙ্গে উদযাপন করতে পারেন।
  • সঙ্গীর কাছে চিঠি লিখুন সম্ভব হলে। একসময় তো সবাই চিঠির মাধ্যমেই মনের কথা প্রিয়জনকে লিখে পাঠাত। আপনি এ উপায়টিও অবলম্বন করতে পারেন।
  • সারপ্রাইজ দিতে চাইলে সঙ্গীর বন্ধুদের সাহায্য নিন। বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে সঙ্গীর ঘরের বিভিন্ন জায়গায় গিফট লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করুন।

১০. এই পথ যদি না শেষ হয়…বাঙালির রোম্যান্টিকতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। তাই গাড়ি থাকলে গাড়িতে, বাইক থাকলে বাইকে, সাইকেল থাকলে তাতে চড়েই একটু দূরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন। দীর্ঘ যাত্রাপথ আপনাদের মধ্যে নতুন সেতু তৈরি করবে। 

১১. ফুল, চকলেট, পুতুল দিয়ে সাজিয়ে রোম্যান্টিক একটা ক্যান্ডেল লাইট ডিনারের আয়োজন করে চমকে দিতে পারেন সঙ্গীকে।

১২. প্রিয় মানুষটি বা আপনাদের যুগল ছবির পোট্রের্ট  হতে পারে অসাধারণ এক উপহার। সেটা যদি নিজের হাতে আঁকা হয় তাহলে তো তা হয়ে ওঠে অনন্য। আর সেটা ভালোবাসা দিবসে উপস্থাপন দিনটিকে অন্য এক মাত্রা দিবে। 

ভালোবাসার দিনকে ভালোবাসার মানুষের সাথে নিজের মনের মতো করে উদযাপনের জন্য উপরের আইডিয়াগুলো কাজে লাগাতে পারেন কিন্তু আপনারাও। আর এরকম আকর্ষনীয় ব্লগ নিয়মিত পেতে ভিজিট করুন sheba.xyz ব্লগ। 

Sheba.xyz app Appliance Repair service

Leave a comment