বাসা শিফটিং এর সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, পরিবারের মানুষজন, বিদায় জানানো সবকিছু নিয়েই আমাদের বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। আর এমন পরিস্থিতিতে ছোটখাটো ভুল হবে না, তা কি হয়! 

আবার এই ভুলের পরিমাণ বেশি হলে পরবর্তীতে তা যেকোনো লস, বিপদ কিংবা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হিসাবে বাসা শিফটিং এর আগে আমাদের এই গাইডলাইনভিত্তিক লেখাটি চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন। 

যেখানে আমরা তুলে ধরবো বাসা শিফটিং এর সময় যে ভুলগুলো করা উচিত না এবং যে ভুলগুলো করলে সহজেই জিনিসপত্র, প্ল্যানিং সর্বোপরি পুরো প্রসেসিংয়েরই ক্ষতি হবে। তো এই সেবা ব্লগে বাসা শিফটিং এর সময় যে ভুলগুলো করা উচিত না তা নিয়ে আলোচনা করি। 

১. তাড়াহুড়ো করে প্যাক করা 

বাসা শিফটিং মানেই ঝামেলা। যারা ঘনঘন বাসা শিফটিং করে তারা প্যাকিং করতে গিয়ে প্রতিবারই কোনো না কোনো ভুল করে বসে। আর এসব ভুল তখনই হয় যখন তাড়াহুড়ো করে প্যাক করা হয়৷ সুতরাং তাড়াহুড়ো করে প্যাক না করে পুরো ঘরের জিনিসপত্র ধৈর্য নিয়ে প্যাক করুন। 

প্যাক করার সময় ক্যাটাগরি ভেদে প্যাক করতে পারলে বিষয়টা আরো সহজ হবে। ছোট ছোট বক্সে হালকা জিনিসপত্র যেমন বালিশ, বই-খাতা, জুয়েলারি বক্স ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্যাক করা যেতে পারে। অন্যদিকে বড় বক্সে ভারী জিনিসপত্র প্যাক করার চেষ্টা করুন। যেখানে ল্যাম্প শেড, বড় মোড়া, মাঝারি সাইজের স্ট্যান্ড টেবিল, মোবাইল স্ট্যান্ড, বিভিন্ন মেশিন ইত্যাদি জিনিসপত্র রাখতে পারেন। আর এ-সকল জিনিসপত্র ঠিকমতো গোছাতে যথেষ্ট সময়ের দরকার পড়বে। সে কথা বিবেচনা করে বাসা ছাড়ার অন্তত ৩-৪ দিন আগে থেকেই ব্যাগ-প্যাক গুছানোর কাজে লেগে পড়া উচিত। 

২. প্রতিটি প্যাকে লেবেল যোগ না করা

সাধারণত বাসা শিফটিং এর সময় ভারী জিনিসপত্র ভ্যান গাড়ি করে বা অন্য কোনো মালামাল বহনকারী গাড়ি করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এক সংসারের জিনিসপত্র একসাথে থাকে বলে পরবর্তীতে সকল জিনিসপত্র ঠিকঠাক আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে গিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। 

তাছাড়া এতো জিনিসপত্রের ভিড়ে কোনটা নেওয়া হয়েছে বা কোনটা নেওয়া হয়নি তা নিশ্চিত হতেই মোটামুটি লেবেলের খবর হয়ে যায়। আর এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি প্যাকে লেবেল যোগ না করার যে ভুলটি রয়েছে সেটি এড়িয়ে চলতে হবে। 

কিচেনের জিনিসপত্রের জন্য একটা লেবেল, স্টাডি রিলেটেড জিনিসপত্রের জন্য একটা লেবেল, সাজগোজ বা কাপড়-চোপড় টাইপের জিনিসপত্রের জন্য একটা লেবেল সেট করে ফেলুন। আর যদি এক্সট্রা লেবেল সেট করাটা ঝামেলা মনে হয় সেক্ষেত্রে প্যাকের গায়েই মার্কারের সাহায্যে ক্যাটাগরির নাম বা সাংকেতিক কিছু লিখে রাখতে পারেন। এর ফলে আশা করি জিনিসপত্রের খোঁজ-খবর রাখাটা অনেক সহজ হবে। 

৩. সঠিক শিফটিং কোম্পানি সিলেকশনে মনোযোগ না দেওয়া

ব্যাগ-প্যাক সবকিছু রেডি তো করলেন! এবার তা পাঠাতে বা সরাতে প্রয়োজন পড়বে মালামাল শিফট করে এমন কোনো গাড়ি এবং কর্মচারী। যদিও শিফটিং কোম্পানিই আপনাকে এসব সিলেক্ট করে দেবে। কিন্তু এখানেও আপনার ভুল করার চান্স থাকবে এবং সেটি হবে সঠিক শিফটিং কোম্পানি সিলেক্ট করতে না পারা। হতে পারে শহরে আপনি বেশকিছু শিফটিং কোম্পানি পাবেন। তবে এসব কোম্পানি আপনার জিনিসপত্র স্থানান্তরের জন্য পার্ফেক্ট কিনা, আপনার যদি কোনো স্পেশাল জিনিসপত্র থাকে তা সঠিকভাবে জায়গামতো পৌঁছে দিতে পারবে কিনা, জিনিসপত্র গাড়িতে তোলার পর এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে কিনা, আপনার বাজেটের সাথে তাদের সার্ভিস ফি মিলবে কিনা এসব কিছু আপনাকে আগেই চেক করে নিতে হবে। 

এক্ষেত্রে আপনার টার্গেটে থাকা শিফটিং কোম্পানির কোনো ব্যাক্তির সাথে পার্সোনালি কথা বলে নিতে পারেন। প্রয়োজনে তার পূর্বের সার্ভিসের রিভিউ চেক করতে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সেবার সার্ভিস প্রমানিত। 

Best Home Shifting Service in Bangladesh by Sheba.xyz

 

আর হ্যাঁ! কোম্পানি হায়ার করে ফেলার পরে তাদের সবকিছু ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতে ভুল করবেন না। প্রয়োজনে এক একটি বিষয় বারবার ক্লিয়ার করবেন৷ আপনার নতুন বাসায় পৌঁছানোর সময় প্রতিটি বাক্স কোথায় কোথায় রাখতে হবে তা কোম্পানিকে আগে থেকেই নিশ্চিত করুন। এতে করে ভবিষ্যতে যেকোনো ভুল হওয়ার চান্স অনেক কমে যাবে। আরেকটা বিষয়! যখন কোম্পানির মুভাররা আপনার ভারি জিনিসপত্র গোছাবে তখন অযথা তাদের সাথে বাড়তি কথাবার্তা বলবেন না। অনেকেই অতিরিক্ত ফরমায়েশি করতে গিয়ে মুভারদের মনোযোগ নষ্ট করে ফেলে। যার কারণে গুছাতে গিয়ে অনেক জিনিসপত্রই তারা মিস করে। অতএব কাজ করার সময় মুভার্সদের অকারণে কোনো ধরণের বিরক্ত করবেন না। 

৪. মূল্যবান জিনিসপত্র সম্পর্কে সচেতন না থাকা

অনেকেই বাসা শিফটিং এর সময় গহনা, টাকা পয়সা বা দামি জিনিসপত্র সাধারণ মালামালের সাথে মিশিয়ে ফেলে। এই ভুল কিন্তু কোনোভাবেই করা যাবে না। মূল্যবান জিনিসপত্র শিফটিং করার সময় হয় ভ্যানে বা কোম্পানির গাড়িতে আপনি নিজেই উপস্থিত থাকবেন আর নয়তো সাধারণ সিএনজি বা প্রাইভেট কোনো যানে করে আপনি নিজেই উক্ত জিনিসপত্র স্থানান্তরিত করবেন৷  কারণ দামি জিনিসপত্র কোম্পানির গাড়িতে ছেড়ে দিলে অনেক সময় তা অজান্তেই গায়েব হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এসব জিনিসপত্র প্যাক করার ক্ষেত্রে বাইরের কোনো হেল্পিং হ্যান্ডের সাহায্য নেওয়াটাও অনেক সময় বড় বোকামি হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং সাবধান থাকুন এবং এই ধরণের ভুল এড়িয়ে চলুন। 

৫. অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গাদাগাদি করা

নতুন বাসায় মুভ করার সময় দেখবেন পুরোনো বাসায় থাকতে থাকতে আপনার এমন অনেক জিনিসপত্র জমে গেছে যেসব জিনিসপত্র বহুদিন ধরে কেউ ব্যবহারই করছে না। তবুও কোনো কারণে হয়তো আপনি গাদাগাদি করে তা ভ্যানে তুলছেন। আসলে এই ভুলটা অতটা মারাত্মক না হলেও এর কারণে বাকি জিনিসপত্র গুছাতে হিমশিম খেতে হয়। তাছাড়া নতুন বাসা গোছাতে গিয়ে জবড়জং পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা এড়াতে অপ্রয়োজনে পড়ে থাকা প্রতিটি জিনিসই বাছাই করে ফেলে দিন। দেখবেন কিছুটা হলেও হালকা লাগছে নিজেকে। 

৬. চেকলিস্ট পুনঃচেক না করা 

বাসা শিফটিং এর সময় শেষ পয়েন্টে এসে করার মতো একটি ভুল হলো চেকলিস্ট চেক না করা। আপনি নতুন বাসায় কি কি জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন তার যে চেকলিস্ট করেছেন সেই লিস্টের সাথে আপনাকে ভ্যানে তোলা জিনিসপত্রগুলো মিলিয়ে নিতে হবে। যদি কোনো প্যাক বাদ পড়ে তা সাথে সাথেই গুছিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে সবকিছু ২ থেকে ৩ বার চেক করতে হবে। ফলস্বরুপ অন্ততপক্ষে কোনো জিনিস ফেলে যাওয়ার মতো সমস্যায় পড়তে হবে না। 

শেষ কথা

আশা করি বাসা শিফটিং এর সময় কোন কোন ভুলগুলো করা উচিত না সে-সম্পর্কে পুরোপুরি আইডিয়া পেয়েছেন। মস্ত বড় এই ঝামেলার কাজটিকে সহজ করতে অবশ্যই আগেভাগে প্ল্যান অথবা চেকলিস্ট সাজিয়ে নেবেন। আর সময় নিয়ে গোছানোর কাজ শুরু করতে পারলে সবকিছুই সহজে সম্পন্ন হবে। 

সেই সাথে নিজে মুভ করার আগে অবশ্যই পুরোনো বাসাটাকে খানিকটা পরিষ্কার করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ-কাজে বিশ্বস্ত বা পরিচিতি কারো সাহায্য নিতে পারলে ভালোই হয়। আশা করি আপনার পরবর্তী বাসা শিফটিং মিশন পুরোপুরি সফল হবে। ধন্যবাদ সেবার সাথে থাকার জন্য।

Sheba.xyz app Appliance Repair service

Leave a comment