আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হল ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, সংক্ষেপে এস.এম.ই। বাংলাদেশে এস.এম.ই –র সংখ্যা আছে ১২লাখেরও বেশী যারা ভূমিকা রাখছেন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো ও নারীক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে । আমাদের দেশের চালিকাশক্তি এই এস.এম.ই-দের নিয়েই সেবা এক্সওয়াইজেডের যাত্রা।

বিশ্বে সেরা ১০ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে বাংলাদেশ একটি। যদি আমাদের দেশের এস.এম.ইদের ডিজিটাল করা যায় , তবে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ এই এসেমিদের উপর ভিত্তি করেই উন্নত দেশদের মাঝে নিজের নাম লেখাতে পারবে।সেবা খাতে  সেবাদানকারী এস.এম.ইদের ডিজিটাল করতেই  ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে সেবা এক্সওয়াইজেড। এ পর্যন্ত ১৭০০ এস.এম.ই সেবায় এসে পাল্টে ফেলেছেন নিজেদের গল্প। গত এক বছরে তারা মোবাইল অ্যাপ ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডেলিভার দিয়েছেন ৭৫,০০০ জব এরও বেশী। তাদের মাঝে কেউ  সাধারণ জীবন থেকে উঠে এসে শুরু করেছেন নতুন জীবন, কেউ খুলেছেন নিজেদের কোম্পানি, আবার সেবা অ্যাপের মাধ্যমেই কাজ ডেলিভার দিয়ে অনেকে আয় করেছেন কয়েক গুণ। এমনই কয়েকজনের জনের গল্প দেয়া হল এখানে –

কাউসার আহমেদ,

মাত্র একজন রিসোর্স নিয়ে শুরু করা কাউসারের কোম্পানিতে কাজ করছে প্রায় ১৬জন রিসোর্স ।অপর নাম – এলাকার “প্লাম্বার”, “স্যানিটারি মিস্ত্রী”, “পানি মিস্ত্রি” । সমাজের চোখে নিজের পরিচয়কে এভাবেই বরণ করে নিয়েছিলেন তিনি। সেবা তাকে সুযোগ দিল, ভিন্নভাবে জীবনটা শুরু করার। যেহেতু তিনি প্লাম্বিং এর কাজে এক্সপার্ট, সুতরাং তিনি আরও কজন প্লাম্বার নিয়ে শুরু করতে পারেন নিজের প্লাম্বিং কোম্পানি। সবরকম সাহায্য সেবা করবে। অ্যাপের মাধ্যমে সেবা এক্সওয়াইজেড তাদেরকে কাজ দিবে সমগ্র ঢাকা জুড়ে। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কাওসারের কোম্পানি। মাত্র একজন রিসোর্স নিয়ে শুরু করা কাউসারের কোম্পানিতে কাজ করছে প্রায় ১৬জন রিসোর্স । গত ৮মাসে তারা ডেলিভার দিয়েছে প্রায় ১৯৭৪টি কাজ !

মোহাম্মদ ইব্রাহিম,

সমাজের চোখে “এলাকার ইলেক্ট্রিশিয়ান”।  তাকেও নিয়ে এল সেবা। ইলেক্ট্রিশিয়ানের পরিচয়েই গর্বিত হয়ে তিনি শুরু করলেন নিজের কোম্পানি, সাউথ বেঙ্গল টেকনোলোজি। সব ধরণের ইলেক্ট্রিক্যাল কিংবা হার্ডওয়্যার সাপোর্ট তার কোম্পানি বাসায় যেয়ে দেয়। সেবার সাথে এসে শুধু নিজের জীবনই নয়, ইব্রাহিম বদলে ফেলেছেন তার কোম্পানিতে কর্মরত আরও ৬জনের জীবনও। আগে তাদের মাসিক ইনকাম ছিল ৬/৭ হাজার টাকা। এখন তা দাঁড়িয়ে হয়েছে ২০ হাজার। আরও অবাক ব্যাপার হচ্ছে, তাদের এখন ঘরে ঘরে যেয়ে কিংবা পথে ঘাটে দেয়ালে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে কাজ খুঁজতে হয়না। স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমেই কাজ পৌঁছে যায় তাদের হাতে।  সেবা এক্সওয়াইজেড তদের কল সেন্টার, ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে হাজারো কাজ পৌঁছে দিচ্ছে এই কর্মঠ দক্ষ সেবা দানকারীদের হাতে।

 

আরশাদ হোসেইন,

বাসা বদলের কোম্পানি Pack and Move । তার কোম্পানিতে কাজ করছেন মোট ৩৬ জন রিসোর্স । এই রিসোর্সরা আগে লুঙ্গি পরে কাজ করত, অনেক ব্যাপারেই  দক্ষতা ছিলনা ।  এমনও হয়েছে যে যার বাসা বদল করতে গিয়েছেন, তার ড্রয়িং রুমের সোফায় বসার জন্য বাসার মালিকের বকাঝকা তুলকালাম অবস্থা।  এই রিসোর্সরা এখন ওয়ার্ক ইউনিফর্ম পরে ট্রেনিং নিয়ে কাজ করছেন আরশাদ হোসেনের কোম্পানিতে। কাস্টোমাররা এখন ভিন্নভাবে আচরণ করেন তাদের সাথে। আগে তাদের দৈনিক ইনকাম ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মতন । কিন্তু এখন তাদের দৈনিক ইনকাম বেড়ে হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ।

বানি’ র,

এখন পার্লারে কাজ করার সময়  আর “পার্লারের মেয়ে” ডাক শুনতে হয় না। নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করে বানি সেবাতে এসে গড়েছেন বানি বিউটি কেয়ার। প্রতিষ্ঠা করছেন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের আত্মপরিচয়।

সেবাএক্সওয়াইজেডের স্বপ্নকে অনেকে প্রথমে অসম্ভব মনে করলেও,  সে স্বপ্ন এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে, এবং তার বাস্তব প্রমাণ সেবার শত শত সার্ভিস প্রভাইডাররা। সেবা প্রমাণ করেছে যে ১৭০০ এস.এম.ই কে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা সম্ভব এবং সেবার লক্ষ্য আগামী এক বছরের মাঝে ১০,০০০ এসএমই কে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা।  সেবা এক্সওয়াইজেড বিশ্বাস করে, আমাদের  এস.এম.ই-রাই দেশের মূল ভিত যাদের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ  নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশ হতে পারবে। ইতিমিধ্যেই যেই ১২লাখ এস.এম.ই দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছেন তাদের যদি ডিজিটাল করা যায়, তখনই আমাদের দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত রাষ্ট্র হওয়া সম্ভব হবে। দেশকে নিয়ে, দেশের মানুষকে নিয়ে এই স্বপ্নজয়ের লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে চলছে সেবা  এক্সওয়াইজেড।

Leave a comment