অলিভ অয়েলের সাথে আমরা সকলেই খুব ভালোভাবে পরিচিত। প্রাকৃতিক উপাদান জলপাই থেকে তৈরি হওয়া এই অলিভ অয়েল রান্নার পাশাপাশি ত্বকের সুরক্ষায়ও বেশ কার্যকরী। অলিভ অয়েল এ রয়েছে এমন বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বকে হাইড্রেটেড করে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। 

তবে ত্বকের সুরক্ষায় কেনই বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করব আর কি কি উপকারিতা রয়েছে তা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত নই। চলুন তাহলে সেবার আজকের ব্লগে ত্বকের সুরক্ষায় কেন অলিভ অয়েল ব্যবহার করবো ও অলিভ অয়েলের ১০ টি উপকারিতা  সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জেনে নেওয়া যাক।

১. মশ্চারাইজেশন

dry lip care in winter

ত্বকের মশ্চারাইজেশন এর জন্য অলিভ অয়েল হলো অন্যতম একটি উৎস। অলিভ অয়েল এ আছে প্রাকৃতিক ইমোলিয়েন্ট যা ত্বককে ভেতর থেকে হাইড্রেটেড রেখে শুষ্কতা প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের সুরক্ষায় আর্দ্রতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েলকে ত্বকের সুরক্ষায় একটি প্রাকৃতিক মশ্চারাইজারও বলা যায়।

২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা

অলিভ অয়েলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য যা ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এতে ভিটামিন ই এবং পলিফেনল এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিকেলের কারণে হওয়া অক্সিডেটেড ক্ষতিসমূহ থেকে রক্ষা করে এবং পাশাপাশি ত্বকের বার্ধক্যের ছাপ হ্রাস করে। অলিভ অয়েলের এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বককে বিশেষভাবে সুরক্ষা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকে রক্ষা করে। 

৩. অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য

অলিভ অয়েলে ত্বকের সুরক্ষায় উপকারী বৈশিষ্ট্য গুলো ছাড়াও রয়েছে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য যা স্ফীত ত্বককে প্রশমিত করে এবং একজিমা, সোরিয়াসিস এর মতো বিভিন্ন চর্ম রোগ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। অলিভ অয়েলের এই অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ উপশম বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে। এ ধরনের চর্মরোগ দূরীকরণে তাই অলিভ অয়েল বিশেষ কার্যকরী উপাদান হিসেবে সহায়তা করে থাকে।

৪. রোদে পোড়া ভাব দূরীকরণ

ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে অলিভ অয়েল অন্যতম। অধিক সময় ধরে ত্বক রোদে পোড়ার ফলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয় এবং অস্বস্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে। রোদে পোড়া ত্বকের লাল লাল ভাব, অস্বস্তি, জ্বালাপোড়া কমাতে এবং এ ধরনের সমস্যা নিরাময়ে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয়। রোদে পোড়া ভাব বা এই ধরনের চর্মরোগ নিরাময়ে অলিভ অয়েল বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. ব্রণ উপশম

ত্বকের একটি সাধারণ রোগ বা অসুবিধা হলো ব্রণ হওয়া আর এই ব্রণ উপশম করতে বা ব্রন নিরাময়ে অলিভ অয়েল বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে। অলিভ অয়েলের রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ব্রণ প্রবন ত্বকে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণ উপশম করে বা ব্রণ হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে দেয়। তবে এই ক্ষেত্রে ত্বকে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে যাতে যাতে ত্বকের ছিদ্র আটকে না যায় এবং ত্বক সুরক্ষিত থাকে।

৬. দাগ দূরীকরণ

ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করতে অলিভ অয়েল বিশেষভাবে সাহায্য করে। অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগের কারণে আমাদের ত্বকে দাগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। ত্বক থেকে এ ধরনের দাগ দূর করতে দাগের মধ্যে অলিভ অয়েল হালকা ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। এর মশ্চারাইজেশন এবং পুনরুৎপাদনকারী বৈশিষ্ট্য গুলোর কারণে সময়ের সাথে সাথে দাগগুলো হালকা হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের পর ত্বক থেকে দাগ দূরীকরণে বিশেষভাবে সহায়তা করে থাকে।

৭. মেকআপ রিমুভার

অলিভ অয়েল একটি প্রাকৃতিক মেকআপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে থাকে। ত্বকে আলতো ভাবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে খুব সহজেই মেকাপ রিমুভ বা অপসারণ করা যায় এবং এর ময়শ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্যের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় না বরং ভেতর থেকে হাইড্রেটেড হয়ে থাকে। তবে মেকআপ রিমুভার হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে যাতে করে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি না পায়।

৮. কিউটিকল এর যত্নে

কিউটিকলের যত্নে অলিভ অয়েল একটি অন্যতম উপাদান যা কিউটিকলকে নরম এবং ময়েশ্চারাইজিং করতে সাহায্য করে। কিউটিকলের যত্নে নিয়মিত সঠিক পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেই তা শুষ্ক, ফাটা কিউটিকল প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে এবং ত্বককে বিশেষভাবে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। 

৯. এক্সফোলিয়েশন

Beauty care for women Sheba.xyz

ত্বকের এক্সফোলিয়েশনের জন্য অলিভ অয়েল একটি অন্যতম উপাদান যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের ডেড সেল বা মৃত কোষ দূর করে ত্বককে ভেতর থেকে উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও অলিভ অয়েলকে চিনি বা লবণের সাথে মিশিয়ে ঘরে বসেই একটি ডাই এক্সফোলিয়েশন স্ক্রাব তৈরি করা যায় যা নিয়মিত ব্যবহারের ত্বকের মৃত কোষ দূর হয় এবং ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।

১০. ত্বকের সুরক্ষা

আমাদের ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে অলিভ অয়েল একটি কার্যকরী উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ত্বক স্থিতিস্থাপক হয় অর্থাৎ অলিভ অয়েল ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখে এবং ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা প্রদান করে থাকে। সঠিক পরিমাণে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহারে ত্বকের স্বাস্থ্য প্রাকৃতিকভাবে উন্নত হয় এবং ত্বক ভেতর থেকে প্রাকৃতিক ভাবে হাইড্রেট হয়।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে কেন আমরা ত্বকের যত্ন অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারি এবং অলিভ অয়েলের উপকারী বৈশিষ্ট্য গুলোই বা কি কি। তবে এছাড়াও অলিভ অয়েলের আরো বেশ কিছু কার্যকরী ও উপকারী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার কারণে ত্বকের সুরক্ষায় অলিভ অয়েল অন্যতম উপাদান হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

শেষ কথা

প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরিকৃত একটি বিশেষ কার্যকরী তেল হলো অলিভ অয়েল যা ত্বকের সুরক্ষায় নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এটি নিয়মিত ব্যবহারে বেশ ভালো ফলাফলও পাওয়া যায়। তবে এটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে সকল ধরনের ত্বকের জন্য অলিভ অয়েল উপযুক্ত নাও হতে পারে। 

সেনসিটিভ বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই ত্বকের সুরক্ষায় অলিভ অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই তা আপনার ত্বকের সাথে মানানসই কিনা তা নিশ্চিত করে নিতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে।

Leave a comment