আপনি কি গাড়ির ইঞ্জিন (Engine Oil) অয়েল কী, কিভাবে কাজ করে, বিভিন্ন ধরণ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান? তাহলে নিচের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

 দূরবর্তী কোন স্থানে যাতায়াতের জন্য গাড়ির কোন বিকল্প নেই। গাড়িতে তো আমরা সবাই চড়ি কিন্তু সেই গাড়িটি যেই ইঞ্জিনের মাধ্যমে চলে সেটির জন্য যে তেল প্রয়োজন হয় সেই সম্পর্কে আমরা কয়জন খবর রাখি? গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের প্রথমে গাড়ির ইঞ্জিন সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। গাড়ির ইঞ্জিনকে গাড়ির প্রধান উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানুষের প্রধান অঙ্গ হার্ট যেমন ভালো থাকলে মানুষও সুস্থ থাকে তেমনি গাড়ির ইঞ্জিন যদি ভালো থাকে তাহলে গাড়িও ভালো থাকবে। 

আর তাই আপনাদের এই কাজে সাহায্য করার জন্যই আমি আজকের সেবা ব্লগে আপনাদের সাথে গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল কী, কিভাবে কাজ করে, বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল কী? 

ইঞ্জিন অয়েল মূলত হচ্ছে ইঞ্জিনের মধ্যে ব্যাবহৃত এক ধরনের লুব্রিকেন্ট জাতীয় পদার্থ। এই পদার্থ গাড়ির অন্তর্দহন ইঞ্জিন থেকে তাপ উৎপাদনের মাধ্যমে গাড়ির ইঞ্জিন পরিচালিত করতে সাহায্য করে।

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েলের প্রকারভেদ

গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে। এগুলো হচ্ছে—

  • মিনারেল: সরাসরি ভূগর্ভ থেকে যে অয়েল আসে সেটিই হিচ্ছে মিনারেল অয়েল।
  • সিনথেটিক: মিনারেল অয়েল পরীক্ষাগারে পরিশোধন করে যেটা প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেটি হচ্ছে সিনথেটিক অয়েল।
  • সেমি সিনথেটিক: মিনারেল এবং সিনথেটিক অয়েল দু’টি মিলিয়ে যে অয়েল প্রক্রিয়াজাত করা হয় সেটি হলো সেমি সিনথেটিক অয়েল।  

আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেমি সিনথেটিক অয়েল।

ইঞ্জিন অয়েল এর কাজ কী

ইঞ্জিন অয়েল একটি ইঞ্জিনের মধ্যে পাঁচ ধরনের কাজ করে থাকে। যেমন—

  • ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিন ও সিলিন্ডারের মধ্যে ঘর্ষণ থেকে রক্ষা করে ফলে ইঞ্জিন ক্ষয় কম হয়।
  • ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের মধ্যে পিচ্ছিলতা তৈরি করে।
  • ইঞ্জিনের সচল হওয়ার পর ইঞ্জিনের মধ্যে যে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় ইঞ্জিন অয়েল সেই তাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ইঞ্জিন অয়েল। 
  • ইঞ্জিনকে পরিস্কার রাখার জন্য ইঞ্জিন অয়েল ডিটারজেন্ট বা পরিষ্কারকারক/ফ্লাশিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ইঞ্জিনের মধ্যে তাপমাত্রা উৎপন্নের ফলে ইঞ্জিনের অনেক ক্ষতি হয়। একটি পেট্রল ইঞ্জিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উৎপন্ন হয় ১৬০ ডিগ্রি আর ডিজেল ইঞ্জিনে ৩২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত। ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল এইসব তাপমাত্রা থেকে ইঞ্জিনকে রক্ষা করে।

অয়েল ফিল্টার কী

ইঞ্জিন স্টার্ট করার পর তাপমাত্রা ও ঘর্ষণের ফলে যে ক্ষয় হয় এর ফলে ইঞ্জিনের ভেতর কিছু কণা জমে। এই কনাগুলো ইঞ্জিন অয়েল এর মধ্যে চলাচল করে যে কারণে ইঞ্জিন অয়েল কে কালো দেখায়। আর এইসব ময়লা পরিস্কার করার জন্য ব্যাবহার করা হয় অয়েল ফিল্টার। এটি ফিল্টারের মাধ্যমে ইঞ্জিনের মধ্যে জমাকৃত সব ময়লা পরিস্কার করতে পারে।

সচল অবস্থায় ইঞ্জিন অয়েল ইঞ্জিনের মধ্যে ঘূরতে থাকে যখনই ইঞ্জিন বন্ধ করা হয় ইঞ্জিন অয়েল চেম্বারে এসে জমা হয়। আর ইঞ্জিন অয়েল এর মধ্যে থাকা ময়লাগুলো ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে নিচে এসে জমা হয়। 

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল চেনার উপায়

ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল চেনার জন্য অয়েলের প্যাকেটের গায়ে চেক করুন— সেটি আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট ও আন্তর্জাতিক লুব্রিকেন্ট স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন দ্বারা স্ট্যান্ডার্ড নির্ণয় করা ও অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা। সবসময় খেয়াল রাখবেন ভালো মানের অরিজিনাল তেল হলে সেটি অবশ্যই একটু ঝাঁজালো ও গন্ধযুক্ত হবে।

Car repair service- Sheba.xyz

নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক

নিম্নমানের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করার কারনে আমাদের প্রিয় গাড়িটির ইঞ্জিন খুব দ্রুত বিকল হয়ে যায় এবং ইঞ্জিনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। নিম্নমানের অয়েল ব্যবহার করলে আপনি যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তা হলো—

  • আপনার গাড়ির মাইলেজ, ইঞ্জিনের এফিসিয়েন্সি, এক্সেলারেশন সবকিছু কমে যাবে। ফলে আপনার মনে হবে যে, আপনার গাড়িটি একটু ভার ভার হয়ে আছে।  
  • ইঞ্জিনের ক্ষয় হবে দ্রুত এবং পিচ্ছিলতা থাকবে না। ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা কমে যাবে। ইঞ্জিন দ্রত গরম হয়ে যাবে। ইঞ্জিন ময়লা হবে বেশি।

 প্রশ্ন: মাল্টিগ্রেড ও মনোগ্রেড কী?

উত্তর: আমরা সাধারণত যখন ইঞ্জিন অয়েল কিনতে যাই তখন দুই ধরনের ইঞ্জিন অয়েল দেখতে পাই— মাল্টিগ্রেড ও মনোগ্রেড। যে ইঞ্জিন অয়েলের গায়ে আমরা সাধারণত দুই ধরনের সংখ্যা দেখতে পাই 5W-30 সেটিই হচ্ছে মাল্টিগ্রেড। আর যে ইঞ্জিন অয়েলের গায়ে আমরা একটি মাত্র সংখ্যা যেমন 10W দেখতে পাই সেটিই হচ্ছে মনোগ্রেড।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কোনটি বেশি ব্যবহৃত হয়? 

উত্তর: বাংলাদেশ সাধারণত মাল্টিগ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

প্রশ্ন: মনোগ্রেড কোথায় বেশি ব্যাবহৃত হয়? 

উত্তর: নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল যেখানে খুব বেশি শীত পড়ে না আবার খুব বেশি গরমও পড়ে না যেমন আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার এলাকা গুলোতে মাল্টিগ্রেড ইঞ্জিন অয়েল ব্যাবহার করা হয়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে মনোগ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল বেশি ব্যবহৃত হয়।

প্রশ্ন: গাড়ি রান করার আগে কিছুক্ষণ ইঞ্জিন স্টার্ট করে রাখা উচিত কেন?

উত্তর: গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল যাতে করে ইঞ্জিনে সবদিকে সঞ্চালন হওয়ার যথেষ্ট সময় পায় এবং ইঞ্জিন যাতে ভালোভাবে গরম হয় সে জন্য গাড়ি রান করার আগে কিছুক্ষণ ইঞ্জিন স্টার্ট করে রাখা উচিত।

প্রশ্ন: কখন ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করা উচিত?

উত্তর: যেহেতু আমাদের দেশে রাস্তায় প্রচুর পরিমাণ বালু থাকে তাই আমাদের উচিত তিন হাজার কিলোমিটারের আগেই ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন করে নেয়া। তবে আপনি যদি সিনথেটিক অয়েল ব্যবহার করেন সেক্ষেত্রে আরও বেশি কিলোমিটার চালাতে পারবেন। 

উপসংহার

আশা করছি, আজকের আলোচনা থেকে গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল কী, কীভাবে কাজ করে এবং বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক তথ্য জানতে পেরেছেন। গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল নিয়ে আশা করছি আপনাদের কনফিউশন দূর হবে। সম্পুর্ন আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ে থাকলে আপনারা সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

যাই হোক, আজকের আলোচনা নিয়ে যদি আপনাদের কোন মতামত থেকে থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ সেবার সাথে থাকার জন্য। 

Service app in Bangladesh- Sheba.xyz

Leave a comment